25 August 2023

আজ নারী নেত্রী আইভি রহমানের মৃত্যু দিন


আইভি রহমান

ভয়াল-বীভৎস ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা, মহীয়সী নারী নেত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বেগম আইভি রহমানের আজ ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। টানা তিন দিন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকার পর ২০০৪ সালের এই দিনে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর হিমশীতল কোলে ঢলে পড়েন তিনি।  
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের প্রিয় সহধর্মিণী বেগম আইভি রহমানের মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৬০ বছর ১ মাস ১৭ দিন। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতির স্ত্রী আইভি রহমানের পুরো নাম জেবুন নাহার রহমান আইভি। ১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই ভৈরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা জালাল উদ্দিন আহমেদ ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও মা হাসিনা বেগম একজন আদর্শ গৃহিণী ছিলেন। 
আইভি রহমান ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ৮ বোন ৪ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ৫ম। তাঁর একমাত্র ছেলে নাজমুল হাসান পাপন বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-৭ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। তাঁর দুই মেয়ে তানিয়া ও ময়না।
ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্যে দিয়ে আইভি রহমান অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য জীবন শুরু করেন। সদালাপি আইভি রহমান ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক। ১৯৭১ সালে তিনি ভারতে গিয়ে সশস্ত্র ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। ২০০২ সালের দলের জাতীয় কাউন্সিলেও তাঁকে একই পদে নির্বাচিত করা হয় এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন তিনি। এর আগে ১৯৮০ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর  মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।  
রাজনীতি ছাড়াও আজীবন সামাজিক কর্মকা-ে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন আইভি রহমান। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী ও জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় মহিলা সংস্থা এবং জাতীয় মহিলা সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন। নারী অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ও সমাজের অবহেলিত শিশু প্রতিবন্ধীদের কল্যাণেও তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।  

আইভি নেই কিন্তু তাঁর স্মতি বহন করছে ভৈরববাসী।  ২৪ আগস্ট এলেই ভৈরববাসীর মনে পড়ে নারী আন্দোলনের রাজপথের সৈনিক ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার আজন্ম সংগ্রামী শহীদ আইভি রহমানের কথা। তিনি নেই কিন্তু তাঁর স্মৃতি বহন করছে ভৈরববাসীর বুকে। অনেকে  নীরবে কাঁদেন। 
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার পল্টনে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা তাঁর সংগ্রামী জীবন কেড়ে নেয়। তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২৪ আগস্ট তিনি মারা যান।  ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মহিলা সংস্থা এবং মহিলা সমিতির চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় অনেক দুস্থ অন্ধজনের চোখে আলো জ্বালাতে সাহায্য করেছেন তিনি। রাজনীতির বাইরে তার এই সমাজকর্ম সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। মহীয়সী এই নারীর মৃত্যুতে ভৈরববাসীসহ জাতি হারিয়েছে নক্ষত্র।
শহীদ আইভি রহমানের স্মৃতি ধরে রাখতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব থানার সামনে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ আইভি রহমান মেমোরিয়াল গেট।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: