খুলনা নগরীর টুটপাড়া এলাকার মেধাবী ছাত্র আশিকুর রহমান। কিছু শারীরিক জটিলতার কারণে ২৩ মার্চ খুলনা নগরীর সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. জওহর লাল সিংহের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্যাস্ট্রোলিভার অ্যান্ড কোলন রেক্টাল রিসার্স সেন্টারে যান তিনি।
সেখানে কোলোনোস্কোপি করে ডা. জওহর লাল সিংহ জানান আশিকের ক্যানসার হয়েছে। দাবি করেন অস্ত্রোপচারে লাগবে আড়াই লাখ টাকা।
কিন্তু ঘটনাটি এত সাদামাটা নয়। ঘটনার বিস্তারিত শুনলে গা শিউরে উঠবে যে কারও। জানা যাবে প্রাণরক্ষাকারী এমন পেশায় কীভাবে ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে কসাই হয়ে ওঠেন অসাধু চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকের ধারণা আরও পোক্ত করতে রোগীর নমুনা পাঠানো হয় বেসরকারি হাসপাতাল ল্যাবএইডে। নির্ধারিত ২৬ তারিখে রিপোর্ট দেওয়ার কথা থাকলেও ৩০ মার্চ ল্যাবএইডের একটি রিপোর্টের ফটোকপি দেখিয়ে ডা. জওহর লাল জানান আশিকের ভয়াবহ ক্যানসার হয়েছে। দ্রুত অপারেশন না করালে রোগীকে বাঁচানো যাবে না।
ইউটিউব লিংক www.youtube.com/@AHTV7170
রিপোর্টের ফটোকপি দেখে কিছুটা খটকা লাগে রোগী আশিকের বাবা আইয়ুব আলীর। মূল রিপোর্ট দেখতে চাইলে জানানো হয়, এটি দেওয়া যাবে না- লাগবে অপারেশনের কাজে।
এরপর সেখানে অপারেশন না করিয়ে, আশিককে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের ভেলোরের একটি হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ক্যানসার নয়, আলসার ধরা পড়ে। ঘটনা এখানেই শেষ নয় বরং শুরু হলো।
ফেসবুক লিংক www.Facebook.com/ahtv7170
ছেলের প্রাণঘাতী ক্যানসার নেই শুনে আনন্দিত হলেও নিজ দেশে চিকিৎসা নিয়ে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ এনে ডা. জওহর লাল সিংহের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠান আশিকের বাবা আইয়ুব আলী।
তবে ওই চিকিৎসক অভিযোগ অস্বীকার করে পুরো দায় চাপান বায়োপ্সি রিপোর্ট করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ল্যাবএইডের ওপর।
ল্যাবএইড জানায়, ঢাকা থেকে তাদের পাঠানো পিডিএফ রিপোর্টে কোথাও ক্যানসারের বিষয়টি উল্লেখ নেই। বরং আলসারের কথা লেখা আছে।
এ বিষয়ে ল্যাবএইড খুলনা শাখার ইনচার্জ মো. জাকারিয়া বলেন, ‘ল্যাবএইড এ ধরনের ভুল রিপোর্টের সঙ্গে কখনই জড়িত নয়। বিএমএ যে সিদ্ধান্ত নেবে তার সঙ্গে আমরা আছি।’
এরপরই রোগীর বাবা অভিযোগ করেন, মূল রিপোর্ট এডিট করে আলসার শব্দ মুছে ক্যানসার লিখে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন ডা. জওহর লাল। তার বিরুদ্ধে বিচারের দাবি জানান তিনি।
রোগীর আশিকের বাবা আইয়ুব আলী বলেন, ‘টাকার লালসায় ভুল তথ্য দিয়ে জাল কাগজ তৈরি করে ওই চিকিৎসক অপারেশন করে আমার ছেলেকে হত্যা করতে চেয়েছেন। চিকিৎসক সমাজের কলঙ্ক ডা. জওহর লাল সিংহ যেন আর চিকিৎসা দিতে না পারেন, তার যেন কঠোর শাস্তি হয়।’
অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেন জওহর লাল সিংহ। পুরো দায় চাপান বায়োপ্সি রিপোর্ট করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ল্যাবএইডের ওপর।
তিনি বলেন, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি তবে বিধি মোতাবেক যে ব্যবস্থা হওয়ার তা হবে। মেডিকেল সায়েন্সে এমন অনেক সময় হয়ে থাকে, মতভেদ হয়। ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট অনেক সময় ভুল হওয়ার জন্য চিকিৎসক ও রোগীদের খেসারত দিতে হয়।
ভুক্তভুগী পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা জেলা বিএমএ এ বিষয়ে তদন্ত করে। বিএমএর একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ ঘটনায় তদন্তে স্পষ্টভাবে জওহর লাল সিংহের প্রতারণার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন।
যদিও খুলনা বিএমএ সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম এ বিষয়ে কৌশলী জবাব দেন।
তিনি বলেন, ‘বিএমএ বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে তদন্ত করছে। ল্যাবএইড মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছে নাকি চিকিৎসকের পক্ষ থেকে প্রতারণা করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
0 coment rios: